• বৃহস্পতিবার, ২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪২৯

সারা দেশ

যে কারণে চুয়াডাঙ্গার তাপমাত্রা বেশি

  • ''
  • প্রকাশিত ১৯ এপ্রিল ২০২৪

চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি: 

বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমের জেলা চুয়াডাঙ্গা। গত কয়েকদিন ধরে মাঝারি থেকে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এ জেলার উপর দিয়ে। গত তিনদিন (১৬-১৮ এপ্রিল) ধরে চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এ জেলার তাপমাত্রা থাকছে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে।

এর মধ্যে গত ১৬ এপ্রিল দেশর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ দশিমক ৬ ডিগ্রি সেলিসয়াস, ১৭ এপ্রিল দেশর সের্বাচ্চ তাপমাত্রা ৪০ দশিমক ৮ ডিগ্রি সেলিসয়াস ও সবশেষ ১৮ এপ্রিল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ দশিমক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায়। যা আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভাষায় তীব্র তাপপ্রবাহ হিসেবেই বিবেচনা করা হয়।

আজ শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) সকাল ৯ টায় তাপমাত্রা ৩৩ দশমিক ০ (শূন্য) ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং এসময় বাতাসের আর্দ্রতা ৪৫ শতাংশ। দুপুর ১২ টায় তা বেড়ে দাঁড়ায় ৪০ দশমিক ০ (শূন্য) ডিগ্রি সেলসিয়াসে এবং এসময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল শতাংশ।

তাপপ্রবাহের এমন অবস্থা এ জেলায় নতুন নয়। প্রতি বছর বেশ কয়েক বার ঘুরে ফিরে আসে তাপপ্রবাহ। কিন্তু এই জেলায় বা এর আশেপাশে কেন তাপমাত্রা এমন চরম ভাবাপন্ন সে প্রশ্ন অনেকের। পরিবেশবিদ ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভৌগোলিক অবস্থান এবং স্থানীয় জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে চুয়াডাঙ্গায় তাপপ্রবাহ বেশি থাকে।

চুয়াডাঙ্গার প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের সিনিয়র পর্যবেক্ষক রাকিবুল হাসান বলেন, গ্রীষ্ম মৌসুমে চুয়াডাঙ্গায় স্বাভাবিকের চেয়ে ২-৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বেশি থাকে। চলতি মাসের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত বেশ কয়েকবার ৪০ ডিগ্রির উপরে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৭ এপ্রিল সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪০ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আজ শুক্রবার এ রেকর্ড ভেঙ্গে যাবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, গত ৪-৫ বছর ধরে দেখছি চুয়াডাঙ্গার তাপমাত্রা ৪০ এর কাছাকাছি থাকে। গত বছর এই সময়ে জেলার তাপমাত্রা ছিল ৪১ থেকে ৪২ ডিগ্রি উপরে। সে তুলনায় সামান্য কম হলেও একই রকম তাপ অনুভব হচ্ছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে, দেশ স্বাধীনের পর থেকে চুয়াডাঙ্গায় ২০১৪ সালের ২১ মে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪৩ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা এখন পর্যন্ত এ জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। এর পরের বছরগুলোতে একাধিকবার তাপমাত্রা ৪০-এর ঘর পার করেছে।

রাকিবুল হাসান বলেন, এ এলাকায় স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি তাপ অনুভব হয়। এর বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে। একটা অঞ্চলে যখন হিট ওয়েভ শুরু হয় তখন যদি এটা দ্রুত রিলিজ হতে না পারে তাহলে সেখানে গরম বেড়ে যায়। তাপ দ্রুত রিলিজ না হওয়ার অন্যতম কারণ হলো, কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া, গাছপালা কমে যাওয়া, জলাধার কমে যাওয়া এসব কারণেই মূলত তাপটা রিলিজ হয় না। ফলে তাপমাত্রাটা বাড়তে থাকে।

এছাড়া জেলাটির ভৌগোলিক অবস্থানের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই মুহূর্তে বিহার, কলকাতা হিট ওয়েভ চলছে। ওখানে যখন তাপমাত্রা বেশি থাকে এখানেও বেশি থাকে। এর কারণ ভৌগোলিকভাবে চুয়াডাঙ্গা পশ্চিমবঙ্গের কাছাকাছি। পশ্চিমবঙ্গের তাপমাত্রা যখন বেশি থাকে এখানে তাপমাত্রা বেশি থাকবে এটাই স্বাভাবিক। আর একটা হিট ওয়েভ যখন পশ্চিমবঙ্গ হয়ে প্রবেশ করে তার একটা অংশ চুয়াডাঙ্গা হয়েও বাংলাদেশে প্রবেশ করে এটাও অন্যতম কারণ।

আবহাওয়াবিদদের মতে, বাংলাদেশে এপ্রিল হচ্ছে সবচেয়ে গরমের মাস। এ সময় পৃথিবী সূর্য লম্বালম্বিভাবে আমাদের দেশে কিরণ দেয়। দেশের প্রেক্ষাপটে চুয়াডাঙ্গা এখন উত্তপ্ত। পশ্চিম দিক থেকে উত্তপ্ত লু হাওয়া (শুকনো গরম হাওয়া) বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এরমধ্যে চুয়াডাঙ্গাও অন্যতম প্রবেশ পথ। লু হওয়া ও অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রার ঊর্ধ্বগতি এই দুইয়ের যুগপৎ সংমিশ্রণে আমাদের চুয়াডাঙ্গাসহ ওই অঞ্চল এপ্রিল মাসে উত্তপ্ত থাকে। একই অবস্থা থাকে মে মাসেও। এমনকি পুরো গ্রীষ্মকালজুড়ে এ এলাকা উত্তপ্ত থাকে।

এ সময় এই অঞ্চলে বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেশি থাকায় স্বাভাবিকের চেয়ে গরম বেশি অনুভূত হয়। বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ ৬০ শতাংশর যত বেশি হবে গরমের তীব্রতাও বৃদ্ধি পেতে থাকবে।

পাথুরে মাটিতে তাপমাত্রা দীর্ঘক্ষণ ধরে শোষণ করে থাকে। বালি মাটি খুব তাড়াতাড়ি গরম হয়ে যায় খুব তাড়াতাড়ি ঠান্ডা হয়ে যায়। আমাদের দেশে প্রচুর অবকাঠামো হচ্ছে। এখন অবকাঠামো যদি বেশি হয় আর সবুজায়ন যদি কম হয় আবার পানির স্তর যদি নিচে নেমে যায় তখনই আবহাওয়া চরম ভাবাপন্ন হয়ে ওঠে। চুয়াডাঙ্গার পরিস্থিতিও এমন। এর ফলে গরমকালে বেশি গরম থাকে শীতকালে বেশি শীত থাকে। যা মরুকরণের লক্ষণ।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads